মাহবুবুল ইসলাম সুমন :এবার বাংলা বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁবাসী পরেছে প্রকৃতির চিরচেনা রুপ কালবৈশাখীর তান্ডবে। কালবৈশাখীর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে মানুষের বাড়িঘর, গাছপালাসহ ফল-ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখের তান্ডবে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। গত শনিবার রাতে হঠাৎ শুরু হওয়া কালবৈশাখীর ঝড় তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে পরেরদিন রোববার শেষ রাতেও।
গত শনিবার রাত নয়টার দিকে হঠাৎ শুরু হয় দমকা হাওয়া। দমকা হাওয়া থাকতেই শুরু হয় বৃষ্টি। দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি যেন খেলায় মেতেছিল। কে কার চেয়ে শক্তিশালী তা যেন দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছিল উভয়ের মধ্যে। এক পর্যায়ে দমকা হাওয়া রুপ নেয় ঝড়ো বাতাসে আর বৃষ্টি তার বর্ষণও বাড়াতে থাকে প্রচন্ডভাবে। প্রচন্ড বাতাস আর বৃষ্টির মিলনে রুপ নেয় ঝড়-তুফানের। বাতাস আর বৃষ্টির মিলন দেখে যেন আকাশও তাদের সাথে মিশে একাকার হতে চাইছিলো। ঝড়-বৃষ্টির পাশাপাশি আকাশ থেকেও সমানতালে শুরু হয় বিদ্যুৎ চমকানো ও বজ্রপাতের। ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টি আর বজ্রপাত মিলে এক ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে মাটিতে আছড়ে পড়ছিল ক্ষণে ক্ষণে। এরমধ্যে মাঝে মাঝে বৃষ্টির সাথে গুড়ি গুড়ি শিল পরা অব্যাহত থাকে। দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে কালবৈশাখীর এই খেলা। তাদের খেলা যেন একস্থানে স্থীর থাকতে চাইছিলনা। কখনো পূর্ব কখনো উত্তর আবার পশ্চিম কখনো আবার দক্ষিণ দিকে ছুটোছুটি করতে থাকে। প্রকৃতির এই বিরুপ খেলার সামনে যেটাই পড়েছে সেটাকেই কোনওনা কোন ভাবে ধসিয়ে দিয়ে গেছে। মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধ অনেকে জানান, দীর্ঘ অনেকবছর পরে বৈশাখ মাসের শুরুতে কালবৈশাখীর ঝড় দেখা গেলো। এদিকে কালবৈশাখীর এমন তান্ডবে উপজেলার জৈনপুর গ্রামের মোস্তফা মেম্বার (সাবেক)’র নতুন দুটি ঘরের টিনের চালা, তহিরুন্নেছার ভবনের সিড়িকোঠার ইট ভেঙে কাঠসহ চালা, সজিব মিয়ারও সিড়িকোঠার চালা, কান্দারগাঁওয়ের জসিম উদ্দিনের সিড়িকোঠার চালা উড়িয়ে অন্যত্র নিয়ে ফেলে। এছাড়াও ভবনাথপুর, পিরোজপুর, মঙ্গলেরগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রাম এবং সোনারগাঁও পৌরসভা, মোগরাপাড়া, বৈদ্যেরবাজার, কাঁচপুর, সাদীপুর, জামপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেকের ঘরের চালা উড়িয়ে নেয়া, আম, লিচু, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ধরণের ফলগাছ উপড়ে ফেলা ও ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসহ কয়েক লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে এই কালবৈশাখী। এছাড়াও বজ্রপাতের কারণে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের রাইজারে আগুন ধরে যায়। অবশ্য এই আগুনে তেমন কোন ক্ষতির সন্ধান পাওয়া যায়নি। কালবৈশাখীর ঝড় চলাকালীন সময়ে আতঙ্কে অনেকে আযানও দিয়েছেন। শনিবারের পর কালবৈশাখী তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রোববার শেষ রাতেও বজ্রপাতসহ বৃষ্টি বর্ষণ করেছে। এতেও বিভিন্ন স্থানের রাইজারে আগুন ধরলেও কোন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বাংলা বছরের শুরুতেই কালবৈশাখীর এমন তান্ডব দেখে ভীতসন্ত্রস্ত ছিল সবাই।